২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ- ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সাতকানিয়ায় প্রভাবশালী চাচার জমি দখলের ষড়যন্ত্র, ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে সই আদায়ের অভিযোগ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার ০৯নং ওয়ার্ডের গোয়াজর পাড়ায় পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে চলা এক ভয়াবহ পারিবারিক বিরোধ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এলাকার সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ও ‘মামলার পরামর্শদাতা’ হিসেবে পরিচিত বদিউল আলম (মিয়া) তার ছোট ভাই জামাল হোসেনের প্রাপ্য সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এর প্রতিবাদ করায় জামাল হোসেনের পরিবার, বিশেষ করে তাদের নারী সদস্যদের প্রতি চলছে অমানবিক নির্যাতন, অশালীন মন্তব্য এবং প্রাণনাশের হুমকি। অসহায় পরিবারটি এখন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে ন্যায় বিচারের আশায় আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে।

আবেদনকারী আব্দুল্লাহ আল আকিব(২৬), (জামাল হোসেনের ১ম পুত্র) লিগ্যাল এইড অফিসারকে জানিয়েছেন, তার দাদা মরহুম আব্দুস সালামের তিন পুত্রের মধ্যে তার বাবা জামাল হোসেন সর্বকনিষ্ঠ। আইন অনুযায়ী তিন ভাইয়ের সমান সম্পত্তি পাওয়ার কথা থাকলেও, গত ২৭ বছর ধরে মেজ চাচা বদিউল আলম (মিয়া) নানা কৌশলে সিংহভাগ সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। এর ফলে, জামাল হোসেনের ৭ সদস্যের পরিবার মাত্র সামান্যটুকু যায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

২০২৩ সালের বন্যায় তাদের কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হলে পুনর্গঠনের সময় দেখা যায়, ঘরের একাংশ প্রতিবেশীর মালিকানাধীন। এর জেরে পরিবারটি প্রায় আট মাস নিজেদের ভিটেতে ফিরতে পারেনি এবং পরবর্তীতে প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার পর তাদের জমির পরিমাণ আরও কমে যায়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, যখনই জামাল হোসেন তার ন্যায্য অংশের কথা বলেন, তখনই বদিউল আলম (মিয়া) ও তার পরিবার মানসিক চাপ, সামাজিক লাঞ্ছনা ও হুমকি দিতে শুরু করে। জামাল হোসেনকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়, তার স্ত্রীকে শারীরিক অবমাননা করে গালিগালাজ করা হয়। তাদের দাবি, তাদের ফুফুর পূর্বের মামলার খরচ না দিলে সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে না। হিসাব চাইলে কটাক্ষ করে বলা হয়, “হিসেব গালে নিয়ে বসে থাকিনাই।”

সর্বোপরি, সম্প্রতি পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বদিউল আলমের ছোট ছেলে আইয়াদ(১৮) আব্দুল্লাহ আল আকিবের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পড়ুয়া বোনদের  নামে অশালীন মন্তব্য ও কটাক্ষ করে সমাজের কাছে তাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করায় আইয়াদ তাদের প্রতি হত্যামূলক হুমকি দিয়েছে, যার অডিও রেকর্ড আবেদনকারীর কাছে সংরক্ষিত আছে। এমনকি আব্দুল্লাহ আল আকিবের সদ্য বিবাহিত বোনের স্বামীকেও তারা মানসিকভাবে হয়রানি করছে।

বদিউল আলমের বড় ছেলে রিয়াদ হোসেন সামাজিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আব্দুল্লাহ আল আকিবকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে লিখেছেন: “কে কী কী করতেছে সব দেখতেছি, ধৈর্যের বাঁধ সবার একদিন ছিঁড়ে যায়। সে দিন কী হবে তার জন্য প্রস্তুত হও। না হয় সময় থাকতে সমাধান কর। ভালো হয়ে যাও, সময় এখনো আছে। মাইর কিন্তু একটাও মাটিতে পরতে দিব না…” এই হুমকির পরও গ্রুপের অন্য সদস্যরা নীরব থেকে হুমকিদাতাকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে বলে অভিযোগ।

এছাড়াও, অভিযোগপত্রে আরও জানানো হয়েছে যে, সম্প্রতি প্রভাবশালী মুরুব্বি ও ব্যক্তিরা যায়গা বন্টোনের জন্য ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে সই করার প্রস্তাব দেন, যা চক্রান্তমূলকভাবে বাকি সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে দাবি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি নতুন নয়। প্রতিবেশীরা বহুবার এই পরিবারকে পারিবারিক দমন-পীড়নের শিকার হতে দেখেছেন। তবে বদিউল আলমের সামাজিক অবস্থান ও প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। কিন্তু এই সমাজসেবকের মুখোশের আড়ালে তার পরিবার গত ২৭ বছর ধরে অবিচার ও হুমকির শিকার। বর্তমানে জামাল হোসেনের পরিবার মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং যেকোনো সময় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে। এছাড়াও তার একটা বোনও (শাহীন আক্তার) গৃহহীন হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সামাজিকভাবে দানবীর হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির এমন অভিযোগে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

আকিব জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে অবিলম্বে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নারী সদস্যদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য অংশ বুঝিয়ে দেওয়া, ফুফুদের প্রাপ্য হক নিশ্চিতকরণ, চলাচলের পথ সুরক্ষিত রাখা এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জমি হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সার্বিক সহায়তা ও ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন।

শেয়ার করুন :